শুধু রাজধানী ঢাকায় হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীর বিআরটিএ ভবনের চেয়ারম্যানের রুম থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুরে স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইনজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিআরটিএ চেয়ারম্যানের নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সঙ্গে দেখা করে নয় দফা দাবিগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইনজামুল হক বলেন, “আজকের আলোচনা আশানুরূপ ছিল না, আমাদের দাবি মানেননি তারা। দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাসও দেননি। এ কারণে আগামীকাল (বুধবার) সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।”
এর আগে দুপুর থেকে রাজধানীর বনানীর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনের সামনে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থান কর্মসূচির কারণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে রামপুরায় যখন কলেজছাত্র মাইনুদ্দিন মারা গেল, আজ সকালে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ ঘোষণা দিলেন শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরের মধ্যে। কিন্তু ঢাকা মহানগরের বাইরের শিক্ষার্থীদের কী হবে? তারা কি পড়ালেখা করে না? যদি হাফ ভাড়া দিতে হয় একযোগে সারা দেশে দিতে হবে। শুধুমাত্র মুখের কথায় হবে না। আইন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
এ সময় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘ছাত্ররা মরবে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শিক্ষার্থীসহ সব সড়ক হত্যার বিচার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. ঢাকাসহ সারা দেশে সব গণপরিবহনে (সড়ক, নৌ, রেলপথ ও মেট্রোরেল) শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য যথাস্থানে ফুটপাত, ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সড়ক দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী এবং পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৫. পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং স্পেস নির্মাণ এবং এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
৬. দ্রুত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলকে নিতে হবে।
৭. বৈধ ও অবৈধ যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈধতার আওতায় আনতে হবে এবং বিআরটিএ’র সব কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকাসহ সারা দেশে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অবিলম্বে স্বয়ংক্রিয় ও আধুনিকায়ন এবং পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. ট্রাফিক আইনের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিষয়টিকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে।